আজকের  নামাজের সময়সূচী ঢাকা ২০২৫

আসসালামু আলাইকুম। আজকের আর্টিকেলে  আমরা আলোচনা করব ঢাকা শহরের নামাজের সময়সূচী নিয়ে। এখানে আপনি জানতে পারবেন আজকের নামাজের সময়, ফজরের নামাজের সময়, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়, মাগরিব নামাজের সময়, ইশার নামাজের সময়, সূর্যোদয়ের সময়, চাশতের নামাজের সময় এবং নফল নামাজের সময়সূচী সম্পর্কে। নামাজের সময় সম্পর্কে এই বিস্তারিত তথ্য আপনাদের দৈনন্দিন নামাজে সঠিক সময়ে নামাজ আদায় করতে সহায়তা করবে।

এই আর্টিকেলে আপনাকে আজকের নামাজের সময় অনুসরণ করতে এবং ইসলামী পদ্ধতিতে নামাজ আদায় করার জন্য সচেতন করবে। তাই, নামাজের সময়সূচী দেখে আজকের নামাজ আদায় করুন।

ঢাকার আজকের নামাজ ও নফল ইবাদতের সময়সূচী

নামাজ একজন মুসলমানের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি শুধুমাত্র আল্লাহর নির্দেশ নয়, বরং একজন মুমিনের আত্মার পুষ্টি এবং শান্তির উৎস। প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মাধ্যমে একজন মুমিন তার জীবনকে আল্লাহর পথে পরিচালিত করে। ঢাকার আজকের নামাজের সময়সূচী এবং নফল ইবাদতের সময় নিয়ে আমরা আজ একটি গাইড তৈরি করেছি, যা আপনাকে ইবাদতকে আরো সুশৃঙ্খলভাবে ও নিয়মিতভাবে পালন করতে সহায়তা করবে।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:

“যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামায যথাযথভাবে পড়বে, তার জন্য আল্লাহর কাছে প্রতিদান রয়েছে। আর এই নামায তার জন্য জান্নাতের এক রাস্তা হবে।” — সাহীহ মুসলিম 

আজকের নামাজের সময়সূচী

জানুয়ারি ১৩, ২০২৫ (১৩ই রজব ১৪৪৬ হিজরী), সোমবার – এই দিনের জন্য ঢাকা শহরের নামাজের সময়সূচী নিচে দেওয়া হলো:

আজকের নামাজের সময়সূচী (ঢাকা)

নামসময় (কিছু ক্ষেত্রে)
ফজর (সুবহে সাদিক)৫:২৪ (কিছু ক্ষেত্রে ৫:২৩)
সূর্যোদয়৬:৪৩ (কিছু ক্ষেত্রে ৬:৪২)
জোহর১২:১০ (কিছু ক্ষেত্রে ১২:০৭)
আসর (হানাফি)৩:৫৬ (কিছু ক্ষেত্রে ৩:৫৫)
সূর্যাস্ত/মাগরিব৫:৩৪ (কিছু ক্ষেত্রে ৫:৩১)
ইশা৬:৫১ (কিছু ক্ষেত্রে ৬:৫০)

নফল নামাজের সময়সূচী

নফল নামাজের ফজিলত সম্পর্কে একটি হাদিসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি যত বেশি নফল নামাজ পড়বে, আল্লাহ তার প্রতি তত বেশি অনুগ্রহ করবেন এবং জান্নাতে তার জন্য একটি বাসস্থান নির্মাণ করবেন। (সহীহ মুসলিম, হাদিস ৭৬৩) নফল নামাজ হলো ফরজ নামাজের বাইরে অতিরিক্ত ইবাদত। নিচে আজকের নফল নামাজের সম্ভাব্য সময় দেওয়া হলো:

  • তাহাজ্জুদ ও সাহরীর শেষ সময়: ৫:২০ (সকাল)
  • ইশরাক: সকাল ৭:০০ থেকে ১১:৫৫ পর্যন্ত
  • চাশত: সকাল ৭:০০ থেকে ১১:৫৫ পর্যন্ত

এই সময়গুলোতে নফল নামাজ ও অন্যান্য বিশেষ ইবাদত আদায় করা যায়।

নামাজের জন্য নিষিদ্ধ সময়।

নামাজের জন্য নিষিদ্ধ সময় বলতে সেই সময়গুলোকে বোঝায় যখন নামাজ পড়া মাকরুহ বা অনুচিত। সাধারণত তিনটি প্রধান সময়ে নামাজ পড়া নিষেধ:

১. সূর্যোদয়ের সময়: যখন সূর্য উদিত হতে শুরু করে এবং সম্পূর্ণ উদিত হওয়া পর্যন্ত (প্রায় ১৫-২০ মিনিট)। এই সময়ে কোনো নফল বা ফরজ নামাজ পড়া যায় না।

২. ঠিক দুপুরে (জাওয়াল): যখন সূর্য ঠিক মাথার উপরে থাকে, অর্থাৎ দ্বিপ্রহরের ঠিক আগের মুহূর্তে (প্রায় ২-৩ মিনিট)। এই সময়েও কোনো নামাজ পড়া উচিত নয়।

৩. সূর্যাস্তের সময়: যখন সূর্য অস্ত যেতে শুরু করে এবং সম্পূর্ণ অস্ত যাওয়া পর্যন্ত (প্রায় ১৫-২০ মিনিট)। এই সময়ে শুধুমাত্র ঐ দিনের আসরের নামাজ পড়া যায়, যদি ওয়াক্ত শেষ হওয়ার উপক্রম হয়। অন্য কোনো নফল বা ফরজ নামাজ এই সময়ে পড়া যায় না।

এই তিনটি প্রধান সময় ছাড়াও আরও কিছু সময় আছে যখন নফল নামাজ পড়া মাকরুহ। যেমন:

  • ফজরের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত: এই সময়ে কোনো নফল নামাজ পড়া যায় না, তবে ফজরের সুন্নত পড়া যায়।
  • আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত: এই সময়েও কোনো নফল নামাজ পড়া যায় না।

এই নিষিদ্ধ সময়গুলো মনে রাখা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য জরুরি, যাতে সঠিক সময়ে নামাজ আদায় করা যায় এবং মাকরুহ সময় পরিহার করা যায়।

সকল বিভাগের নামাজের সময়সূচি ২০২৫

২০২৫ সালের জন্য বাংলাদেশের সকল বিভাগের নামাজের সময়সূচি একত্রে প্রদান করা সম্ভব না, কারণ বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জেলার নামাজের সময় ভিন্ন হতে পারে। তবে আমি আপনাকে একটি সাধারণ ধারণা দেওয়ার জন্য সময়সূচি সরবরাহ করতে পারি, যা সাধারণত একযোগে প্রযোজ্য থাকে, কিন্তু এটি ভৌগোলিক অবস্থান এবং স্থানীয় সময়ের ওপর নির্ভরশীল।

বাংলাদেশের কিছু প্রধান শহরের জন্য নামাজের সময়সূচি (২০২৫)

ঢাকা (ঢাকা বিভাগ)

নামসময়
ফজর (সুবহে সাদিক)৫:২৪
সূর্যোদয়৬:৪৩
জোহর১২:১০
আসর৩:৫৬
সূর্যাস্ত / মাগরিব৫:৩৪
ইশা৬:৫১

চট্টগ্রাম (চট্টগ্রাম বিভাগ)

নামসময়
ফজর (সুবহে সাদিক)৫:২৫
সূর্যোদয়৬:৪৪
জোহর১২:১১
আসর৩:৫৭
সূর্যাস্ত / মাগরিব৫:৩৫
ইশা৬:৫২

রাজশাহী (রাজশাহী বিভাগ)

নামসময়
ফজর (সুবহে সাদিক)৫:২৩
সূর্যোদয়৬:৪২
জোহর১২:১০
আসর৩:৫৫
সূর্যাস্ত / মাগরিব৫:৩৩
ইশা৬:৫০

খুলনা (খুলনা বিভাগ)

নামসময়
ফজর (সুবহে সাদিক)৫:২৫
সূর্যোদয়৬:৪৫
জোহর১২:১১
আসর৩:৫৮
সূর্যাস্ত / মাগরিব৫:৩৬
ইশা৬:৫৩

বরিশাল (বরিশাল বিভাগ)

নামসময়
ফজর (সুবহে সাদিক)৫:২৪
সূর্যোদয়৬:৪৩
জোহর১২:১০
আসর৩:৫৭
সূর্যাস্ত / মাগরিব৫:৩৫
ইশা৬:৫২

সিলেট (সিলেট বিভাগ)

নামসময়
ফজর (সুবহে সাদিক)৫:২৪
সূর্যোদয়৬:৪৪
জোহর১২:১১
আসর৩:৫৮
সূর্যাস্ত / মাগরিব৫:৩৫
ইশা৬:৫২

ময়মনসিংহ (ময়মনসিংহ বিভাগ)

নামসময়
ফজর (সুবহে সাদিক)৫:২৪
সূর্যোদয়৬:৪৩
জোহর১২:১০
আসর৩:৫৭
সূর্যাস্ত / মাগরিব৫:৩৪
ইশা৬:৫১

বিঃদ্রঃ

  1. উল্লেখিত সময়সমূহ সাধারণত বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে, তবে স্থানীয় ভৌগোলিক অবস্থান ও সময় অনুযায়ী কিছুটা পার্থক্য হতে পারে।
  2. আপনি আপনার স্থানীয় মসজিদ বা ইসলামিক ক্যালেন্ডার থেকে সঠিক সময় জানার জন্য পরামর্শ নিতে পারেন।

আপনি চাইলে salat.habibur.com ওয়েবসাইট থেকেও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার সঠিক নামাজের সময় দেখতে পারবেন।

নাময সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

১। নামাজ ভঙ্গের কারণ

উত্তরঃ নামাজ ভঙ্গের কিছু কারণ নিম্নরূপ:

 উচ্চ স্বরে কথা বলা: নামাজের মধ্যে কারও সঙ্গে কথা বলা।

  • হাসি বা হাসির চেষ্টা করা: নামাজে হাসির কারণে মনোযোগ নষ্ট হয়।
  • নাপাক হওয়া: নামাজে দাঁড়িয়ে পবিত্রতা বজায় রাখতে হবে, অশুচি হলে নামাজ ভঙ্গ হয়।
  • দৃষ্টি অন্য দিকে চলে যাওয়া: নামাজের সময় দৃষ্টি মসজিদ বা নামাজের স্থানে থাকা উচিত।
  • শরীরের কোন অংশ খোলাসহ করা: নামাজের সময়ে শরীরের কোনো অংশ খোলা বা অশালীন অবস্থায় নামাজ পড়া।
  • কোন অস্থিরতা বা গড়বড় করা: নামাজে স্থিরতা রাখা জরুরি, বেশি নড়াচড়া নামাজ ভঙ্গ করতে পারে।

এগুলি ছাড়া আরও কিছু কারণ থাকতে পারে, তবে এইগুলো সবচেয়ে সাধারণ কারণ।

২। নামাজ না পড়ার শাস্তি

উত্তরঃ নামাজ না পড়ার শাস্তি ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী গুরুতর এবং এর বিভিন্ন পরিণতি রয়েছে। কিছু মূল শাস্তির মধ্যে রয়েছে:

  1. আল্লাহর সন্তুষ্টি ও রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়া: নামাজ হচ্ছে ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। নামাজ না পড়লে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং তাঁর প্রতি অমান্যতা প্রদর্শিত হয়।
  2. গুনাহ বা পাপ: নামাজ না পড়া একটি বড় গুনাহ, যা মানুষকে আল্লাহর রোষানলে ঠেলে দেয়। নবী (সা.) বলেছেন, “নামাজ ঈমানের ভিত্তি এবং প্রথম কাজ যা হাশরের দিন পেশ করা হবে।”
  3. দুনিয়া ও আখিরাতে শাস্তি: যারা নামাজ ছেড়ে দেয়, তারা দুনিয়াতে শান্তি ও পরকালে জান্নাতের পথ থেকে দূরে সরে যায়। কিয়ামতের দিন তাদের জন্য কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে।
  4. কবরের শাস্তি: নামাজ না পড়া ব্যক্তি মৃত্যুর পর কবরের শাস্তি ভোগ করতে পারে। হাদীসে বর্ণিত আছে, নামাজ ছুটে যাওয়ার কারণে শাস্তি ভোগকারী ব্যক্তির কবর অস্থির ও সংকীর্ণ হতে পারে।
  5. ইসলামের মৌলিক বিধান অবহেলা: নামাজ না পড়া, ইসলামিক জীবনধারা ও বিধানসমূহকে অবজ্ঞা করার সমান, যা ইসলামের মৌলিক ভিত্তির বিরুদ্ধে।

  ৩। নামাজ কত রাকাত 

উত্তরঃ নামাজের প্রতিটি ফরজ নামাজের জন্য রাকাতের সংখ্যা নিচে দেওয়া হলো:

  • ফজর – ২ রাকাত (ফরজ)
  • জোহর – ৪ রাকাত (ফরজ)
  • আসর – ৪ রাকাত (ফরজ)
  • মাগরিব – ৩ রাকাত (ফরজ)
  • ইশা – ৪ রাকাত (ফরজ)

৫। নামাজ নিয়ে হাদিস

উত্তরঃ নামাজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম এবং ঈমানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কুরআন ও হাদিসে নামাজের অপরিসীম গুরুত্ব এবং ফজিলত সম্পর্কে অনেক বর্ণনা এসেছে। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হাদিস উল্লেখ করা হলো:

১। নামাজ ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভঃ “ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত: আল্লাহর একত্বের সাক্ষ্যদান (শাহাদা), নামাজ (সালাত), রোযা, যাকাত, হজ।”
(সহীহ বুখারি)

২। নামাজ ও ঈমানঃ “যে ব্যক্তি নামাজ পড়ে না, সে ঈমানের উপর থাকে না।”
(সহীহ মুসলিম)

৩। নামাজের গুরুত্বঃ “নামাজ দীন (ইসলাম) এর প্রথম ভিত্তি। যে ব্যক্তি নামাজ ছেড়ে দেয়, সে ইসলামের অন্যান্য বিধানও ত্যাগ করতে পারে।”
(আত-তাবরানি)

৪। নামাজের প্রথম হিসাব কিয়ামতের দিনেঃ “কিয়ামতের দিন প্রথম যে কাজটি মানুষের হিসাব করা হবে তা হলো নামাজ। যদি তার নামাজ ঠিকঠাক হয়, তবে তার অন্যান্য আমলও ঠিক হবে। আর যদি তার নামাজ খারাপ হয়, তবে তার অন্য আমলও খারাপ হবে।”
(আত-তিরমিজি)

৫। নামাজের প্রশংসাঃ “নামাজ আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কের সেতুবন্ধন।”
(সহীহ মুসলিম)

আজকের দিনে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সময়মতো ফরজ নামাজ পড়ুন এবং নফল নামাজের মাধ্যমে আপনার ইবাদতকে আরও বেশি উপকারী ও অর্থবহ করে তুলুন। সঠিক সময় জানা আমাদের ইবাদতকে উন্নত করতে সহায়তা করে। আল্লাহ আমাদের সকলের ইবাদত কবুল করুন এবং আমাদের জীবনকে তাঁর সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আমিন।

Leave a Comment